ওসি প্রদীপের ঘুষের অর্থে স্ত্রীর নামে কোটি টাকার সম্পত্তি
কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি ওসি প্রদীপের নিজের নামে কোনো সম্পদ না থাকলেও তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে রয়েছে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, সোনার গয়না সহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
প্রদীপের বিরুদ্ধে দায়ের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্তে এমন তথ্যই পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। তবে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেননি।
দুদক চট্টগ্রামের পিপি অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রীর নামে এসব সম্পদ করেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
অভিযোগপত্রে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন, ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং উক্ত টাকা পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে।
২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন আইনের ২৬ (২), ২৭ (১) ধারা, ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং আইনের ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের হয়েছে। মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, প্রদীপের স্ত্রী চুমকির নামে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দু’টি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি রয়েছে। এছাড়াও আছে অর্ধশত ভরি স্বর্ণালংকার ও ব্যাংক হিসাবে নগদ টাকা। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে একটি বাড়ি, কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট, ৪৫ ভরি সোনা, একটি কার, একটি মাইক্রোবাস রয়েছে। তার ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকার। তার ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ওসি প্রদীপের দু’টি বাড়ির মধ্যে নগরীর পাথরঘাটা আরসি চার্চ রোডে ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’ নামে ছয়তলা একটি বাড়ি রয়েছে। ১৯৯৫ সালে প্রদীপের সঙ্গে চুমকির বিয়ের ১০ বছর পর ২০০৬ সালে এই বাড়ির জায়গাটি কেনেন চুমকির বাবা অজিত কারণ। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে তিনি চুমকিকে বাড়িটি দান করেন। এছাড়া নগরীর পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় ৬ গণ্ডা জায়গার ওপর আরেকটি সেমিপাকা বাড়ি রয়েছে প্রদীপের। ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ১ কোটি ৪৯ লাখ ৯২ হাজার টাকায় বাড়িটি কেনা হয়।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, চুমকি তার সম্পদ বিবরণীতে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় একটি মাছের খামার রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। ২০০২ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এই খামার থেকে দেড় কোটি টাকা আয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু চুমকির আয়কর রিটার্নে এর উল্লেখ নেই। অর্থাৎ চুমকি ভুয়া মাছের ব্যবসা দেখিয়েছেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোনের দায়ের করা হত্যা মামলায় প্রদীপ কারাগারে যান গত বছরের ৬ আগস্ট।
গত ২৭ জুন এই মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে প্রদীপসহ ১৫ আসামীর বিচার শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, গত বছরের ২৩ আগস্ট প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৯ জুন প্রদীপের স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদ রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে রাখার জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন প্রদীপের স্ত্রী।