রাজধানীতে কোটি টাকা তোলাবাজি ৫০ সিসা বারে
অপরাধ প্রতিবেদকঃ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় প্রায় অর্ধশত সিসা বারের মাসিক তোলাবাজি কোটি টাকা। তালিকা ধরে একেকটি সিসা বার থেকে মাসে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় হয়।
পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তারা এই তোলাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন। তালিকায় স্থান পেয়েছে বনানী, গুলশান, উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকার সিসা বারগুলো। এই তালিকার বাইরে আরো শতাধিক সিসা বার রয়েছে, যেগুলোর তোলাবাজি স্থানীয় রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করেন।
উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের জন্মদিন কিংবা যে কোনো উদ্যাপন উপলক্ষ্যে পার্টিগুলোর রঙিন আকর্ষণ এখন সিসা সেবন। রেস্টুরেন্টের আদলে গড়ে ওঠা এসব সিসা বার বা লাউঞ্জে শুরুর দিকে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের যাতায়াত থাকলেও এখন প্রায় সব শ্রেণির তরুণ-তরুণীর আনাগোনা বাড়ছে। সিসা বারে বুঁদ হয়ে থাকেন তরুণ-তরুণীরা। এসব রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার পর সিসা সেবন ‘ডেজার্ট’ হিসেবে মনে করা হয়।
পুলিশের তালিকায় রাজধানীর সবচেয়ে বেশি সিসা বার রয়েছে বনানী এলাকায়। বনানীতে আল গ্রিসিনো, লাল সোফা, কিউডিএস, রিলোডেট, ফিউশান হান্ট, ব্ল্যাক ব্রিচ কিচেন অ্যান্ড লাউঞ্জ, গোল্ডেন টিউলিপ, এআর লাউঞ্জ, প্লাটিনাম, মিন্ট আলট্রা লাউঞ্জ, আরগিলা, টিজেএস, পেট্টাস ও ফারহান নাইটসহ ২২টি সিসা বার পরিচালিত হয়। গুলশানে মন্টানা লাউঞ্জ, ডাউন টাউন ও কোর্ট ইয়ার্ড বাজারসহ ছয়টি সিসা বার পরিচালিত হচ্ছে। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডে এলএইচএফ ফুড, সাত মসজিদ রোডে ঝাল লাউঞ্জ, এইচটুও, অ্যারাবিয়ান নাইটস, ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডে লাউঞ্জ সিক্স, সেভেন টুয়েলভ ও ফুড কিংসহ ১০টি সিসা বার এবং উত্তরা এলাকায় ৪ নম্বর সেক্টরে হাঙরি আই-১, হাঙরি আই-২, উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে ক্যাফে মিররসহ ১২টি সিসা বার রয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, সিসা পরিমাণ নিয়ে একটি মাপকাঠি রয়েছে। কোনো একটি অভিযান পরিচালনা করতে গেলে, আগে সিসার পরিমাণ নিশ্চিত করতে হয়। তবে সিসা বারে মাদকসহ পরিমাণের বেশি সিসা ব্যবহার করার অভিযোগ পেলেই পুলিশ অভিযান চালায়। ইতিপূর্বে এসব অভিযোগে বেশ কয়েকটি সিসা বার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সিসা ক্ষতিকারক মাদক কি না— এ বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মধ্যে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যেসব বারে সিসার মধ্যে নিকোটিনের পরিমাণ শূন্য দশমিক দুই এর নিচে সেসব বারে অভিযান চালানো যাবে না। এর চেয়ে বেশি পরিমাণের নিকোটিন থাকলে অভিযান পরিচালনা করা যাবে। পরিমাণগত সমস্যার কারণে সিসা বারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চালানো নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’ কার্যকর হয়েছে। ঐ নতুন আইনে সিসাকে মাদকদ্রব্যের ‘খ’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনে মাদকসম্পর্কিত অপরাধ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে সিসা বারের মালিকরা সিসা সেবন ক্ষতিকর বা বেআইনি নয় বলে মনে করছেন। তাদের মতে, সিসা ক্ষতিকারক কোনো মাদক নয়। এটি সেবন খাবারের পর একধরনের ‘ডেজার্ট’ (ভোজের শেষে পরিবেশিত মিষ্টি, ফলমূল, আইসক্রিম ইত্যাদির মতো)।