সাবেক ডিসি সুলতানা সহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলবে
বিশেষ প্রতিবেদকঃ মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন সহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
এর ফলে ডিসিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলতে আর কোনও বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আরডিসি নাজিম উদ্দীনের করা আবেদন খারিজ করে রবিবার (৭ মার্চ) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। নাজিমুদ্দিনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহানারা বেগম।
সাবেক ডিসিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আরিফুল ইসলামের করা অভিযোগপত্র অনুসারে কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দীন, সহকারী কমিশনার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও সহকারী কমিশনার এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫-৪০ জন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে এ মামলা গ্রহণ করতে বলা হয়।
একই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে দেওয়ার সাজার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে সাজা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘেষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
আরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া সাজার বৈধতা প্রশ্নে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে সাংবাদিক আরিফের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট (বর্তমানে অ্যাটর্নি জেনারেল) এএম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
হাইকোর্টের ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ৩১ মার্চ ডিসি সহ জড়িত অজ্ঞাতনামা ৩৫/৪০ জনের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম থানায় ফৌজদারি মামলা করেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আরিফুলকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জানা যায়, সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ। এ বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়।
এই ঘটনায় কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পরে ওই সাজার বৈধতা নিয়ে গত ১৫ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনে টাস্কফোর্সের নামে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আরিফুল ইসলামকে অবৈধ সাজা ও আটক করা কেন সংবিধান পরিপন্থী হবে না, আরিফুল ইসলামকে ৫০ লাখ টাকা কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।
এছাড়াও রিটে কুড়িগ্রামের ডিসি, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তাদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তলবের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আরিফের বিরুদ্ধে করা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলার নথি এবং টাস্কফোর্স পরিচালনার নথি তলবের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আরিফুল ইসলামকে রিট আবেদনে পক্ষভুক্ত হতে নির্দেশ দেন। এরপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল সহ এ মামলার আদেশ দেন।