তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ – বিএনপি’র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকেন

তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ – বিএনপি’র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঘুমিয়ে থাকেন

বিশেষ প্রতিনিধিঃ বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে থাকেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন,‘বিএনপির জনপ্রিয়তা যে কমে গেছে বা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তাদের নেতাকর্মীরা যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ঘরের মধ্যে ঘুমান, তাদের প্রার্থীরাও যে ঘুমিয়ে থাকেন, সেটি তারা স্বীকার করতে রাজি না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির একজন কাউন্সিলরও পাস করতে পারেননি। এটি তাদের দুর্বলতা।’

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে ‘১৪তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশ ২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ মন্তব্য করেন। চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ এই উৎসবের আয়োজনে করে। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে অনেক জেলায় পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে। আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব সময় ছোটখাটো ঘটনা ঘটে। এবারও বিভিন্ন পর্যায়ে যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানেও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সার্বিকভাবে নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে হয়েছে এবং হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বাইরেও অনেকে নির্বাচিত হতে পারতো। আর বিএনপি একইসঙ্গে ভাঙা রেকর্ড বাজাচ্ছে।’

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের দুর্নীতির বিষয়ে সাংবাদিকরা তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পরপর পাঁচ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দুর্নীতিতে যারা চ্যাম্পিয়ন, তারা দুর্নীতির কথা বললে মানুষ হাসে। আর পাপুল কি আওয়ামী লীগ করে? সে হলো স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তার দুর্নীতির দায় কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের ওপরে পড়ে না। কুয়েতে তার দুর্নীতি ধরা পড়েছে এবং সেখানে বিচার হয়েছে। দুদক পাপুলের স্ত্রী ও কন্যাকে ডেকেছে।’

চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের অনুপ্রেরণা দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে হবে এটি কোনও কথা নয়। ১৮ বছর বয়সের নিচে হয়েও চলচ্চিত্র বানানো সহজ কথা নয়। এটি অনেক বড় কাজ। যা অনেক সময় বড়দের ক্ষেত্রেও করা কঠিন। অনেক শিশু ফিল্ম তৈরি করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। সত্যিই এখান থেকে অনেক মেধাবী বের হয়ে আসবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে প্রত্যয়ী করার ক্ষেত্রে, জীবনযুদ্ধে পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে, স্বপ্ন দেখানোর ক্ষেত্রে, শিশু চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকের পৃথিবীতে মানুষ শুধু ছুটে চলছে এবং কীভাবে একে-অপরকে ল্যাঙ মেরে উপর দিকে চলে যাবে, সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এভাবে ছুটে চলতে গিয়ে মানুষ প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক হচ্ছে। মানুষ ক্রমাগত যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে যন্ত্র হয়ে যাচ্ছে। মানুষ যদি যন্ত্র হয়ে যায়, তাহলে তাদের মানবিকতা লোপ পায়। মানুষের মধ্যে যদি মানবিকতার সুপ্ত গুণটি শিশু বয়সে বিকশিত করতে হয়, তখনই ওই শিশুরা বড় হয়ে নিজেকে গড়ার ক্ষেত্রে, সমাজকে গড়ার ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখে। ছোটবেলায় আমাদের শিক্ষকরা যে শিক্ষা আমাদের দিয়েছিলেন, সেগুলো জীবনের শিক্ষা। কলেজ বা বিশ্বববিদ্যালয় জীবনে অনেক নৈতিক শিক্ষার কথা শুনেছি, কিন্তু ছোটবেলার নৈতিকতার শিক্ষাই আমাদের বেশি মনে পড়ে।’

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘শিশুদের মেধা ও মনন বিকশিত করতে চলচ্চিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই মাধ্যমে মানুষের জীবনধারাকে যেমন সহজে তুলে ধরা যায়, তেমনই ইতিহাস-ঐতিহ্যকেও তুলে ধরা যায়।’ দেশের প্রতিটি উপজেলায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি।

এরইমধ্যে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন বলে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই টিকা নিরাপদ নয়, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে অনেকে। এই টিকার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, কোনও ঝুঁকি নেই। এই টিকা নিয়ে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি।’

দ্বিতীয় পর্বে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে প্রদীপ প্রজ্বলনের পর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন— চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের অনুষ্ঠান সম্পাদক রায়ীদ মোরশেদ মনন, উৎসব সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন উৎসবের পরিচালক ফারিহা জান্নাত মিম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রদর্শিত হয় মার্তা কারভোসকা পরিচালিত পোলিশ চলচ্চিত্র ‘ট্রিপল ট্রাবল’। এবারের উৎসবে ঢাকার মোট ৩টি ভেন্যুতে ৩৭টি দেশের ১৭৯টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরদিন (রবিবার) থেকে শাহবাগের কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত— সকাল ১১টা, দুপুর ২টা, বিকাল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মোট ৪বার চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। প্রতিটি প্রদর্শনীতে একাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখানো হবে। উৎসবের সকল প্রদর্শনী অভিভাবক, শিশু-কিশোরসহ সবার জন্য উন্মুক্ত। সিনেমা দেখার জন্য কোনও ধরনের প্রবেশ মূল্য না থাকলেও এ বছর করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে মাস্ক পরাকে চলচ্চিত্র উৎসবের টিকিট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পুরো উৎসবটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রদত্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উৎসবের পরিচালক ফারিহা জান্নাত মিম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top