ধুলার দূষণে বিশ্বের শীর্ষ ঢাকা, রোড সুইপার ট্রাক পড়ে আছে
বিশেষ প্রতিবেদকঃ রিয়েলটাইম এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে গত শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার বাতাস ছিল ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। ধুলার দূষণে বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর মধ্যে ঘুরেফিরে ঢাকার নাম আসবেই। বাতাসের মান তলানিতে থাকলেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই দুই সিটি করপোরেশনের। উল্টো, ধুলাবালি কমাতে সংস্থা দুটির কাছে থাকা ৬টি অত্যাধুনিক রোড সুইপার ট্রাক ফেলে রাখা হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রযুক্তি থাকলেও তা ব্যবহার না করা দায়িত্বের চরম অবহেলা। এর জন্য সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি ধুলা দূষণের জন্য শহরে রেড অ্যালার্ট জারিও আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
ঢাকার মাত্রাতিরিক্ত ধুলা-দূষণের পেছনে দায়ী করা হচ্ছে নির্মাণকাজ, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ও বর্জ্যের অব্যবস্থাপনাকেই। পরিস্থিতির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। অথচ এর জন্য শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নতুন করে প্রকল্পও নেওয়া হচ্ছে। এগুলো আদৌ সফল হবে কি না তা নিয়েও পরিবেশবিদদের শঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঢাকার বাতাসের মানোন্নয়নে ৮০২ কোটি টাকা ব্যয়ে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। পুরো টাকাই খরচ হয়েছে। কিন্তু বাতাসের মান উন্নয়ন তো দূরের কথা, ১২ বছরে দূষণ আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে আরও সাত হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। দেশের পরিবেশের মানোন্নয়নে যা এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত, বাস্তবতা ও টেকনিক্যাল বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা হলে আগের মতো এ প্রকল্পও ভেস্তে যাবে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, দেশের সার্বিক পরিবেশের গুণগত মান উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (বেস্ট)’ নামের একটি বড় আকারের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি দেশের বায়ু ও পানির মান এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেছেন, পরিবেশ অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করবে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি সমন্বিত পদ্ধতিতে পরিবেশ দূষণ সমস্যার সমাধান করবে বলেও জানান তিনি।
আগে দেখা যেত, ধুলার দূষণ কমাতে দিনে দু’বেলা বিশেষ গাড়ি দিয়ে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে পানি ছিটানো হতো। পাশাপাশি সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়েও কড়াকড়ি ছিল সিটি করপোরেশনের। কিন্তু গতবছর ও এখন পর্যন্ত এমন কোনও কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। এ জন্য সংস্থা দুটির কোনও কর্মসূচিও নেই। ফলে ধুলার হাত থেকেই রেহাই নেই নগরবাসীর।
এদিকে রাজপথের ময়লা-আবর্জনা, ধুলোবালি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনকে ২০টি রোড সুইপার ট্রাক দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন তিনটি করে ৬টি সুইপার ট্রাক পেয়েছে। প্রতিটি গাড়ি দিনে প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কার করতে পারবে বলে জানানো হয়। গতবছরের ৩০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গাড়িগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করলেও এখন পর্যন্ত রাস্তায় নামেনি সেগুলো।
দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো এবং রোড সুইপারের মাধ্যমে ধুলাবালি টেনে নেওয়ার কাজ নিয়মিত চলছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এমন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না বলে দাবি নগরবাসীর। তারা বলছেন, নগরভবনের মাঠে ধুলা পরিষ্কারের অত্যাধুনিক যন্ত্রগুলো ফেলে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ বি এম আমিনুল্লাহ নুরী বলেন, ‘ধুলার নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। পানি ছিটানোর পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চলছে। ধুলো সৃষ্টিকারী ঠিকাদার ও ভবন নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। সেইসঙ্গে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি রোধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা আরও কঠোর হবো।’
উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ধুলা দূষণে পরিকল্পনা নিয়েছি। বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত পানি ছিটানো হচ্ছে। অতিরিক্ত খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেওয়া হচ্ছে না। নিয়মিত মনিটরিং হচ্ছে।’