আসছে শৈত্যপ্রবাহ, হতদরিদ্রদের দুর্ভোগ লাঘবে – ‘প্রস্তুত’ সরকার
আবহাওয়া প্রতিবেদকঃ এই সপ্তাহের শেষ দিকে উত্তরাঞ্চল থেকে ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
শীত বাড়লে দুর্ভোগে পড়ে হতদরিদ্র মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার শীত শুরু হওয়ার আগেই কম্বল বা শীতবস্ত্র বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতোপূর্বে শৈত্যপ্রবাহের সময় পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র সরবরাহে প্রস্তুত তারা।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে ১২ বা ১৩ জানুয়ারির পর থেকে দু-এক জায়গায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। ওই সময় পর্যন্ত তাপমাত্রা একটু একটু করে বাড়বে, আবার হঠাৎ কমে গিয়ে আবার বেড়ে যেতে পারে, কিন্তু তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না।’
নতুন করে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে তা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে আভাস দেন আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
শীতে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রস্তুতির কথা জানিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সরকারিভাবে আমরা ৩৫ হাজার পিস কম্বল পেয়েছি, শীতবস্ত্র কেনার জন্য টাকা পেয়েছি ৬৫ লাখ। কম্বল প্রথম ধাপে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ৪৬০টি করে বিতরণ করেছি। ৬৫ লাখ টাকা তিনটি পৌরসভাসহ উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। তারা রুচিসম্মত ভাবে শীতবস্ত্র কিনেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা শীতার্তদের মধ্যে এগুলো বিতরণ করছেন। ব্যাংকসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে এক লাখের মতো কম্বল ও শিশুদের সোয়েটার আমরা বিতরণ করেছি।’
এখন শীত একটু কম জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আবার শৈত্যপ্রবাহ আসছে। সেটা মোকাবিলার জন্য স্টক আছে। এছাড়া মন্ত্রণালয় হয়তো আরও কম্বল দেবে। আমরা আরও এক লাখ কম্বল চেয়েছি, তবে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে কাভার করতে পারব। পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অন্ধ, হরিজনসহ এ ধরনের যারা আছেন, তাদের আমরা কাভার করছি, এরপর অন্যান্য জায়গায় যাচ্ছি।’
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘দেড় লাখের মতো কম্বল হলে আমরা মোটামুটি কাভার করতে পারি। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ৭০ হাজারের মতো কম্বল আমরা পেয়েছি। সেগুলো বিতরণ করছি। বেসরকারিভাবেও শীতবস্ত্র দেয়া হয়। আশা করি কাভার করতে পারব।’
‘সামনে হয়তো শীত বাড়বে। আমরাও সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছি’—বলেন নীলফামারীর ডিসি।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এবার শীত আছে; তবে মাত্রাটা তত বেশি নয়। শীতবস্ত্র যা পাচ্ছি তা বিতরণ করছি। তেমন কোনো সঙ্কট নেই।’
ইতোমধ্যে শীতবস্ত্র কিনতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে ২২ হাজার কম্বল ও বেসরকারিভাবে তিন হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৪ হাজার সোয়েটার ও পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও চাহিদা দেয়া আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৫১ হাজার পিসের বেশি কম্বল পেয়েছি। সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া শীতবস্ত্র বিতরণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি উপজেলার জন্য ছয় লাখ করে টাকা পাওয়া গেছে। বিতরণ শেষ হলে আমরা আবার বরাদ্দ চাইব। বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। আমাদের শীতবস্ত্রের সেভাবে কোনো সংকট নেই।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা এক লাখের বেশি কম্বল বিতরণ করেছি। এখন শীত একটু কম, শীত আবার বাড়লে আমরা আরও কম্বল চাইব মন্ত্রণালয়ের কাছে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের কম্বল আমরা মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করেছি। এছাড়া শীতবস্ত্র কিনে বিতরণের জন্য সব জেলায় অর্থ দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শীত বাড়লেও শীতবস্ত্র সরবরাহের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। কোনো জেলা থেকে চাহিদা আসলেও আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তা দিতে পারব। অর্থ সংকট নেই, অর্থ বরাদ্দ দিলে তারা শীতবস্ত্র কিনে নিতে পারবে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থা অধিদফতরের পরিচালক (ত্রাণ) মো. আনিছুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সারাদেশে ২৬ লাখ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে ৩০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এবার শীত কম, তাই অন্যবারের মতো সেভাবে চাহিদা আসেনি। এছাড়া আগে থেকেই প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং চাহিদার চেয়ে বেশি বরাদ্দ রেখেছি। কোথাও থেকে চাহিদা এলে আমরা তা পূরণ করব।’