ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে সিনহা হত্যা মামলার চার্জশিট জমা
জেলা প্রতিনিধিঃ মেরিন ড্রাইভের বাহারছরা এবিপিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অবশেষে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
ওসি প্রদীপসহ ১৫জনকে অভিযুক্ত করে আজ রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন র্যাব-১৫ এর কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি) মো. খায়রুল আলম। অভিযুক্তদের মাঝে ১৪ জন কারান্তরিণ এবং একজন পলাতক। দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময় আলোচিত এই মামলাটি তদন্ত শেষে আজ রোববার বেলা ১০ টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর আদালত এলাকায় এএসপি মো. খায়রুল আলম বলেন, সিনহা হত্যা মামলাটি আমরা নানা ভাবে তদন্ত করেছি। তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলো সাজিয়ে চার্জশিট হিসেবে জমা দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।
তিনি আরো বলেন, হত্যার ঘটনা তদন্ত নেমে র্যাব এ ঘটনায় ১৫ জনের সংশ্লিষ্টটা পেয়েছে। অভিযুক্তদের মাঝে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপসহ ১৪ জন কারান্তরিণ রয়েছে। সাগর নামে ওসি প্রদীপের এক সহযোগীকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার, বাহারছড়া ক্যাম্পের পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাড়াও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএনের তিনজন এবং স্থানীয় তিনজনসহ মোট ১৪ জন অভিযুক্তের পর গ্রেফতার হয়েছে।
গত ৩ জুলাই ‘জাস্ট গো’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ট্রাভেলস শো ডকুমেন্টারির শুটিংয়ের জন্য তিনজন সহযোগীসহ কক্সবাজারের নীলিমা রিসোর্টে ওঠেন মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এই খবর পৌঁছায় টেকনাফের তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমারের কাছে। তখন থেকেই ওসি প্রদীপ অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘ভিডিও পার্টিকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে, যেকোনো মূল্যে।’ এরপর থেকেই সিনহাকে নজরদারিতে রাখেন পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত।
৩১ জুলাই সকালে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বৃক্ষরোপণ’ অনুষ্ঠান শেষে ওসি প্রদীপকে জানানো হয়, মেজর সিনহা রাশেদ প্রাইভেটকার নিয়ে টেকনাফের শামলাপুর পাহাড়ে গেছেন। এ সময় সোর্সের মাধ্যমে বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী সিনহার প্রতি নজর রাখতে থাকেন।
ওইদিন (৩১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের দিকে আসার পথে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে তল্লাশির নামে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আলোচনা হয় বিদেশেও।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন ও নিরাপত্তা বিভাগ। তখনই তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলিসহ সকল পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে, ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে, যিনি সিনহাকে গুলি করেছিলেন। টেকনাফ থানার ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয়েছে ২ নম্বর আসামি। এজাহারে বলা হয়েছে, গুলি করার আগে লিয়াকত তার সঙ্গে ফোনে পরামর্শ করেছিলেন। ওসির ‘ প্ররোচনা ও নির্দেশনাতেই’ লিয়াকত ঠান্ডা মাথায় সিনহাকে গুলি করে হত্যা করেন। পরে প্রদীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিনহার ‘মুখমন্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পায়ের জুতা দিয়ে আঘাত করে’ বিকৃত করার চেষ্টা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে টেকনাফ থানার এসআই দুলাল রক্ষিতকে, যিনি সিনহার মৃত্যুর পর মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন। এরপর অভিযুক্ত সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে র্যাব হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিনজন ছাড়াও এপিবিএনের তিন সদস্য, প্রদীপের দেহরক্ষী এবং পুলিশের মামলার তিন স্বাক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় মামলাটি রুজু হয়। দণ্ডবিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয় (মামলা নম্বর সিআর: ৯৪/২০২০ইং/টেকনাফ)।