ইউটিউব চ্যানেল-আইপি টিভি সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না
বিশেষ প্রতিনিধিঃ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউটিউব চ্যানেল ও আইপি টিভি সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান মন্ত্রী। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।
অনেক ইউটিউব চ্যানেল আছে যারা অনলাইনে কার্যক্রম চালাচ্ছে- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইউটিউব চ্যানেল বা আইপি টিভি নিবন্ধনের জন্য আমরা দরখাস্ত আহ্বান করেছি। সেগুলো তদন্তের কাজ চলছে। প্রাথমিক তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। সেটি হওয়ার পর আমরা নিবন্ধন দেয়ার কাজ শুরু করব। এক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইপি টিভিগুলো শুধুমাত্র এন্টারটেইনমেন্ট (বিনোদন) চ্যানেল হিসেবে কাজ করবে। সমস্ত বিষয়গুলো নরমাল টেলিভিশন চ্যানেলের মতো করার কথা নয়, এ রকম সিদ্ধান্ত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ইউটিউব চ্যানেল ও আইপি টিভি নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না। এমনিতেই কোনো টেলিভিশন চ্যানেল যখন অনুমতি পায় শুরুতে তারা সংবাদ পরিবেশনের অনুমতি পায় না। সেজন্য তাদের কিছু প্যারামিটার পূরণ করতে হয়, আবার দরখাস্ত করতে হয়। তারপর তারা সংবাদ প্রকাশের অনুমতি পায়। সুতরাং আইপি টিভির ক্ষেত্রেও অন্যান্য সবকিছু করতে পারবে কিন্তু সংবাদ পরিবেশনের কাজটি তারা আপাতত করতে পারবে না- এটি আমাদের মন্ত্রণালয় নয়, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত।’
পরে তারা সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে কি না- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পরে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সরকার যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এখনকার সিদ্ধান্ত হচ্ছে তারা সংবাদ পরিবেশন করবে না।’
অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন কবে শেষ হবে- জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অনলাইন নিবন্ধনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি অনলাইনকে নিবন্ধনের জন্য অনুমতি প্রদান করেছি। বাকিগুলো আমরা ধীরে ধীরে দেব। যেহেতু কয়েক হাজার অনলাইন, এগুলো সম্পন্ন করতে কয়েক মাস সময় লাগবে। কারণ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা রিপোর্ট দেয়ার পরই কিন্তু আমরা দিতে পারছি। এর আগে তো দিতে পারছি না। সেই কারণেই একটু সময় লাগছে। বেশিরভাগকে নিবন্ধন দেয়ার কাজ এই বছরের মধ্যে আমরা শেষ করার চেষ্টা করব। অনলাইন নিবন্ধনের কাজ এই বছর শেষ হলেই শেষ হয়ে যাবে তা নয়। কারণ অনলাইন তো ভবিষ্যতেও অনেকগুলো প্রকাশিত হবে।’
‘পত্রিকা প্রকাশ করতে হলে অনুমতি লাগে, টেলিভিশন চ্যানেল খুলতে হলে লাইসেন্স লাগে। ভবিষ্যতে যখন অনলাইন নিবন্ধনের কাজটি শেষ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব তখন আমরা ভবিষ্যতে অনলাইন খোলার ক্ষেত্রেও অনুমতির বিষয়টি সংযুক্ত করব’ যোগ করেন মন্ত্রী।
টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ কর্মীদের ওয়েজবার্ডের বিষয়টি কতদূর এগিয়েছে- জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘টেলিভিশনের ঠিক ওয়েজবোর্ড নয়। সম্প্রচার আইন যখন হবে, এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সম্পন্ন হয়েছে। এরপর মন্ত্রিসভা হয়ে সংসদে যাবে। সম্প্রচার আইনের আলোকে টেলিভিশন, রেডিও, এমনকি অনলাইনসহ এই সমস্ত মাধ্যমের সাংবাদিকদের বেতন-ভাতাদি আইনি কাঠামোর মধ্যে আসবে।’
সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করা, পরীক্ষা নেয়াসহ নীতিমালা করা হবে কি না- জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। এখানে একটি নিয়ম-নীতি থাকার প্রয়োজন আছে। কিন্তু ডিগ্রি পাস হলেই শুধু এই পেশায় আসতে পারবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে এটার সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করি। অনেক মেট্রিক পাস মানুষ এমএ পাস লোকের চেয়েও ভালো জানে ভালো লিখে। এমন আমাদের দেশে আছে। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠন উদ্যোগ নিলে আমরা সরকার সেটিতে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি। এখানে নিয়মনীতি থাকা প্রয়োজন, যে কেউ একটা পত্রিকা বের করে সাংবাদিক সেজে যাওয়া। সেটি সমীচীন নয়।’
তিনি বলেন, ‘ডিগ্রির কথা বলছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিন্তু কোনো ডিগ্রি ছিল না, কবি নজরুলেরও কোনো ছিল না। বিল গেটস কম্পিউটার সায়েন্সে ফেল করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে। এখন বিল গেটসের ওপরই পিএইচডি হয়। এ রকম বহু উদাহরণ আছে। সুতরাং পাসই যোগ্যতার মাপকাঠি সবসময় নয়। পাস একটি মাপকাঠি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর একটি গণমাধ্যম বয়কটের কথা বলেছেন। এভাবে সে গণমাধ্যম বয়কটের ডাক দিতে পারে কি না- এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে অবাধ মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। সেই স্বাধীনতার কারণেই যে কেউ যেকোনো কথা বলছে। কে কোন গণমাধ্যম দেখবে কী দেখবে না- সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। সেটি কেউই নির্দিষ্ট কিংবা নির্ধারণ করে দিতে পারে না।’
বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।