মুন্সীগঞ্জ পিটিআই হারালো একজন নেতা, একজন সুহৃদ – বিদায় কামরুজ্জামান
মানব জন্মের রহস্য কেউ জানে?
মানুষ খায়–দায়-ঘুমায় একই নিয়মেই
তথাপিও কেউ এই মানুষের মাঝেই হয় নন্দিত কেউ নিন্দিত!
কেউ বাগানকে করে বিরান কেউ ফুলে ফলে সাজায়।
এমনই একজন মানুষের সাথে বহুদিনপর আচানক দেখা হলো, খানিকটা বিজলী চমকের মতো। কতো বছর চাকুরি করছি। কখনো বুঝিনি আমি গুরুত্বপূর্ণ কেউ! সব সময় ভয় শঙ্কায় অস্থির থাকতাম। মনে হতো এই বুঝি ভুল হয়ে যাচ্ছে! একদিকে বস অন্য দিকে সিনিয়র বলে যারা দাবড়ে বেড়ায় তাদের ছড়ি এতো উড়ে ভুলেই যাই আমার অস্তিত্ব আছে দুনিয়ায়।
খালি পরীক্ষা! পরীক্ষা! ক্লান্তিকর দিনগুলো ঝলমল করে উঠলো যার জন্য তিনি জনাব কামরুজ্জামান, সুপারিন্টেন্ডেন্ট,পিটি আই মুন্সীগঞ্জ। আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো আমি মানুষ।আর একজন মানুষ ছিলেন জনাব নজরুল ইসলাম, ডিজি নেপ, ময়মনসিংহ।
আমি লিখি এজন্যই তিনি আমাকে সম্মান করতেন। আমার একটি শিশুতোষ গল্পের বই প্রজাপতির দেশে’ আমি তাকেই উৎসর্গ করেছি। তখন প্রচন্ড কষ্টের দিন ছিলো। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আমি আসলে কে এবং কী? আমি যখন পরিপূর্ণ আমি হয়ে উঠছিলাম ওমনি বেজে উঠলো তার চলে যাবার ঘন্টা। এবারও ঠিক তাই হলো। নিজেকে গুছিয়ে তীব্র আমিত্বে যখন আমি হয়ে উঠছি ঠিক তখনই বাজল তাঁর যাবার ঘণ্টা । মন খারাপ হলেও এটাই তো চিরায়ত নিয়ম। মানতেই হবে …
২০১৩ সালে আমি মুন্সীগঞ্জে জয়েন করতে এসে অবাক হয়ে গিয়েছি। কেমন জঙ্গল টাইপের একটি প্রতিষ্ঠান।কিন্তু কিছুদিন যেতেই অভ্যস্ত হয়ে গেলাম, কৃষ্ণচূড়ার রূপ পলাশের রঙ, কচুরিপানার শোভায় আঁটকে গেলো চোখ, ভরে গেলো মন। একা একাই সে রূপে ডুবে থাকি। সুযোগ পেলেই বনবিহারে ডুবে যেতাম। তারপর একদিন চেষ্টা চললো কচুরিপানা নিধনের। ব্যর্থ হলো। কারণ প্রতিষ্ঠান সে গতিতে এগোয় ঠিক তার চক্রবৃদ্ধি গতিতে তারা পাখা বিস্তার করে।
অবশেষে একদিন ধরা খেলো আমাদের সুপার কামরুজ্জামান স্যার এর রাডারে। রাতারাতি পরিষ্কার। যে চোখ এক সময় কচুরিপানার রূপে মুগ্ধ হতো সে চোখে ঢেউ খেলে যায় স্বচ্ছ জল। তাতে নামানো হলো খেয়া তরণী, স্বচ্ছজলের তলে পাখনা মেললো হরেক রকম মাছ।
এ কাজটি মোটেই সহজ ছিলো না। সহজ করেছেন যাঁকে আমরা হারালাম তিনি। একক নেতৃত্বে হয়ে উঠলেন অনন্য। বাইরের মানুষের অত্যাচারে জর্জরিত পিটিআইকে সুরক্ষিত করলেন সিসিক্যামেরার আওতায় এনে। নিজের ব্যক্তিগত টাকা খরচ করে শ্রেণিকক্ষ থেকে পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতায় আসায় বাইরের এবং ভেতরের সব মানুষ সতর্ক হয়ে উঠলো। প্রথমে হোঁচট খেলাম, আমি ক্লাসে কেউ একজন আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে কেমন লাগবে! পরে এমন অভ্যস্ত হলাম ক্যামেরা অফ থাকলে এতিমের মতো মনে হতো!
ভেতরে আগে থেকেই শহীদ মিনার, শাপলা, ম্যাপ থাকলেও নতুন করে প্রবেশ পথেই দাঁড় করালেন আরো তিনটি ম্যাপ। মুন্সীগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর। তিনটি ম্যাপকে বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বকুল ফুল। নতুন করে বসালেন, আরো কিছু মনুমেন্ট। সেখানে মুন্সীগঞ্জের বিখ্যাত ব্যাক্তিদের ছবি সহ কীর্তি শোভা পেলো।
প্রশাসনে নিয়ে আসলেন দারুণ পরিবর্তন। কারো সাথে উচ্চস্বরে কথা বলা দূরে থাক কখনো মন খারাপ করতে দেখিনি। অফিস স্টাফ একজনও তখন ছিলো না। সমস্ত কাজ একাই করছেন। আইসিটিতে এতোটাই দক্ষ তিনি আমাদের কাজও করে দিচ্ছেন, আমাদেরকে পেপারস, পেন প্রিন্টার সব কিছু ব্যবহারের অবাধ স্বাধীনতা দিলেন। পুরাতন জঞ্জালকে অনায়াসে ব্যবহার উপযোগী করে তুললেন, চেয়ার টেবিল মেরামত করলেন, পান যোগ্য পানি প্রতিটি ফ্লোরেই সহজলভ্য করলেন, পানির ট্যাংক, বেসিন, নতুন করে অজুখানা, নতুন ওয়াশরুম তৈরি, জাস্ট পিটিআই এর অঙ্গসজ্জায় নতুন রূপের ঢেউ। টাইম মানে টাইম, ক্লাস মানে ক্লাস। কেউ অনুপস্থিত থাকলে নিজেই চলে যাচ্ছেন ক্লাসে,ক্লাসরুমে পারমানেন্ট আইসিটি ব্যবহারের সরঞ্জামাধী স্থাপন করলেন। রুটিন নিজেই প্রিন্ট বের করে দিচ্ছেন, স্কুল ভিজিট মনিটরিং কী ভাবে অনলাইনে করবে সবাইকে মোটিভেট করা চলতেই থাকলো।
বড়ো ব্যাপার আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যাও আমলে নিতেন, কার কী ভাবে কাজে সুবিধা সেটা নিশ্চিত করতেন। আমাদের ছিলো ইজি এক্সেজ। সেটা সাধারণত প্রশাসকদের সাথে হয় না। একটা আতঙ্ক সব সময় কাজ করে যেটি প্রেসার,ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু কামরুজ্জামান স্যার, নিজের সীমানার ভেতর থেকেই সবার সাথে আপনজন হয়ে উঠলেন। যে কোন সমস্যা উপস্থাপন করতে দেরী কিন্তু সমাধান করতে দেরী নেই। প্রশাসকগণ আমাদের এ সি আর’ লিখেন। আমরাও কিন্তু আমাদের ক্যামেরায় তাঁদের মূল্যায়ন করি।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি এক্সপ্রেসিভ আর্ট শারীরিক শিক্ষা এবং মিউজিকের জন্য যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।
হারমোনিয়াম, তবলা, পিয়ানো থেকে যাবতীয় ইন্সট্রুমেন্ট তাঁর সহযোগিতায় সচল করেছি। খেলাধুলার ইন্সট্রুমেন্ট দুটো হোস্টেলে যেমন দিয়েছেন তেমনি দিয়েছেন মাঠে। ২০১৯ এর মে মাস থেকে পিটিআই এর মাঠ গরম করে রেখেছি, ফুটবল টুর্নামেন্ট, ক্রিকেট ম্যাচ, ভলবল, ব্যাডমিন্টন দিয়ে। এ এক আনন্দোৎসব যেন। আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মাঠে সাথে আছেন তিনি গাইড।
গাছ লাগিয়েছেন প্ল্যান করে। নারকেল গাছ আম গাছ, সফেদা, জলপাই ফলদবৃক্ষ লাগিয়েছেন, পুরাতন বিল্ডিং টেন্ডার করে বিক্রি করেছেন। সে কাজ এখনো মাঠে চলছে। করোনায় সবাই ঘরে তিনি মাঠে..
আনন্দঘন পরিবেশ মানসিকস্বাস্থ্য শারীরিকস্বাস্থ্য এবং শিখনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরী। স্যার সে বিষয়টি যেমন নিশ্চিত করেছেন তেমনি আইন টো টো ধারণ করেছেন। সে কোন আয়োজনে সর্বাগ্রে তাঁর স্টাফ সদস্যদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষার্থীদের ছিলো ইজিএক্সেজ। তবে কাঁধে হাত রাখতেন না। ছাত্র- শিক্ষক ফ্রেন্ডলি হতেই হবে কিন্তু শিক্ষককে অবশ্যই শিক্ষকই হতে হবে- এ নীতি তিনি মানতেন। অনিয়মিত হওয়ার জন্য অনেক শোকজ করেছেন। সবাই মনোকষ্টে ভূগলেও সতর্ক হয়েছে নিজেদের উপস্থিতি এবং কর্ম সম্পর্কে। ২০১৯-২০২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বারো মাসে তের পার্বণ লাগিয়েই রাখতো, স্যার কখনো বাধা দেননি। কারণ এখানেও লার্নিং আছে। তারা পিটিআই এর মাঠে জাতীয় প্রোগ্রাম ছাড়াও করেছে কালচারাল ইভিনিং। স্যার আমাকে ডেকে বললেন, আপনি আছেন। আর কিছুই না।
আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থেকে সব নিশ্চিত করে তবেই ফিরেছিলাম। যে কোন অনুষ্ঠানে তিনি দিয়েছেন পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সাপোর্ট। আমার কথা , চাওয়া,কাজের ধরণে তাঁর ছিলো পূর্ণ সমর্থন। শিক্ষার্থীদের সাথে আমার সম্পর্ক তিনি এক কথায় সাপোর্ট করতেন। একজন মানুষের পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি। তিনি এ বিষয়ে যথেষ্ঠ ওয়াকিবহাল। প্রতিটি সদস্যের সাথে আপনি সম্পর্ক ধারন করেন। সাবঅর্ডিনেট বলে চতুর্থশ্রেণির কর্মচারিকেও আপনি ছাড়া তুমি সম্বোধন করেননি।
অনেক ক্ষেত্রেই আমাকে / আমাদেরকে স্যার ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমাদের চারুকারু ইন্সট্রাক্টর জনাব রফিকুল আলম, আর একজন নাইস পার্সন, সব কাজে স্যারের সাথেই ছিলেন। এ কদিন মনেই হয়নি চাকুরি করছি। যেন একটি টিমওয়ার্কের ভেতর হাসি আনন্দে দিন পার হয়ে যাচ্ছে। এক পরিবার যার কর্তা, নেতা সুপারিন্টেন্ডেন্ট কামরুজ্জামান। পূর্ববর্তী স্টেশন থেকে চলে আসার পর সেখানকার ইন্সট্রাক্টর শাহানা ম্যাডামের সাথে একটি ট্রেনিং প্রোগ্রামে দেখা হয়েছিলো। তিনি বললেন, স্যার বদলীর অর্ডারের পর কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়েছি, কে জানতো আরো কেউ সেই রকম বালিশ ভেজাবে!
পরীক্ষণ বিদ্যালয় নিয়ে তাঁর চেষ্টার ঘাটতি ছিলো না। প্রাক প্রাথমিক ক্লাস সাজিয়েছেন, মায়েদের সাথে মিটিং, শিক্ষার্থীদের সাথে মিটিং,শিক্ষকদের মোটিভেশন কোথায় নেই তিনি…
হ্যাঁ, সবাইই এ সব কাজ করে থাকেন। সবাই ভিন্ন। এই ভিন্নতার ভেতরও রয়েছে আন্তঃঐক্য। সে ঐক্যে নিঃসন্দেহে সুপারিন্টেন্ডেন্ট কামরুজ্জামান জামান সমাদৃত। বসকে সবাই মেনে চলে, চলতেই হয়,কিন্তু ভালোবাসে না। স্টাফরুমে স্যার সম্পর্কে একটা নেতিবাচক মন্তব্য কেউ করেনি বরং কোন সমস্যা হলেই আমরা হাসতাম,একে অপরকে বলতাম স্যারের কাছে যান। সলভ হয়ে যাবে।
নতুন ব্যাচের ভর্তি অনলাইনে। স্যার নিজের হাতে সবার ফর্ম পূরণ, পরামর্শ সব দিয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ, অনলাইনে ক্লাস চালুতে পাইনোনিয়ার মুন্সীগঞ্জ পিটিআই। আমাদের দেখে পহেলা জুলাই থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে। এখানে না বললেই নয়, তিনি নিজেই ভিডিও ধারণ করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে, আইসিটি গ্রুপে দেয়া,বিভিন্ন কন্টেন্ট আপলোড দেয়া,গ্রুপে দেয়া, লিঙ্ক তৈরি করে সবাইকে মেইলে দেয়া একক ভাবে স্যার করেছেন।
এতো খাটেন যে মাঝে মাঝে আমি নিজেই বলতাম,স্যার বাসায় যান,খেয়ে আসেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের পিতা।
একজন পুরুষ মানুষের সবচেয়ে নান্দনিক দিক তিনি নারীকে সম্মান করেন কী না। এ নান্দনিক দিকেও তিনি চ্যাম্পপিয়ন। উনার দৃষ্টি স্বচ্ছ। তাই পারিবারিক জীবনেও অত্যন্ত সুখী একজন মানুষ। এত কাজের পরও কন্যাদের,তাদের মায়ের আবদার তিনি রক্ষা করেই যান। অফিসে যেমন নীরবে বিপ্লব ঘটান তেমনি পারিবারিক জীবনেও সদাহাসিখুশি একজন মানুষ।
মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি। তবুও ভিন্ন। সেই ভিন্নতার জন্য কারো গ্রহণযোগ্যতা বেশি কারো কম। ব্যক্তিগত ভাবে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ সময়ে শান্তিতে যেমন কাজ করেছি তেমনি মর্যাদাও কম দেননি। আমার সাহিত্যাচর্চাকে নেগেটিভলি নেননি। একবার এক বস পেয়েছিলাম , আমার সামনেই পিটি আই এর ম্যাজিনের জন্য লেখা আর্টিকেল আমার সামনেই কেতে কুটি কুটি করেছেন। সামান্য একজন শক্ষকের কী সাহস অসামান্য লিখেন! ওই আর্টিকেল পরবর্তীতে জাতিয় একতি পত্রিকা থেকে আত্ম প্রকাশ করেছিল। আর এক জন বস পেয়েছিলাম, যিনি বলেছিলেন, আপনার অনুষ্ঠানে আমি যাবো? আপনি মঞ্চে থাকবেন আমি বাইরে, একজন শিক্ষক মাত্র আপনি! দুজনেরই কথার কোন প্রকার উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি, কিন্তু আমাদের কামরুজ্জামান স্যার ২০২০ এর বই মেলায় বউ-বাচ্চা নিয়ে গিয়েছেন, কোথায় কোন স্টলে আমার বই ছিলো তিনি খুঁজে খুঁজে কিনেছেন। সে সময় আমি মেলায় ছিলাম না পরে একটু পেয়েছি । বিষয়টি আমার জন্য উষ্ণতার বৈকি! সাহিত্যাঙ্গনে আমার পদচারনা না পারিবারিক ভাবে বা অফিসিয়ালি কোন ভাবেই আমি সাপোর্ট পাইনি এবং পাই নাগ এ আমার একার যুদ্ধ। উনি অন্তত আমাকে আমার লেখার জায়গা নিয়ে কোনদিন খোঁটা দেননি। বরং লিখি বলেই সম্মান করতেন। কথাগুলো এ জন্যই বলছি মানুষে মানুষে প্রভেদ বোঝানোর । বাদবাকি পুরো জীবনে প্রতিটি বস আমার কলমকে কটাক্ষ করেছেন, আমার প্রাপ্য মর্যাদা আমাকে দিতে গিয়েও যেন কুন্ঠিত হতেন। প্রশংসা করতে গিয়ে পিন ঢুকিয়ে দিতেন। চাকুরীকালীন স্বর্ণালী যুগ শেষ হলো। জানি না সামনে কী আছে…
চলুন এক নজরে তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখে আসি_
চাকুরিতে প্রথমযোগদান করেন মাগুরা পিটিআইতে । ১৪/০৪/২০০৭ হতে ১০/০৩/২০১১) । সেখানে তাঁর অর্জিত সাফল্য সমূহ: বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ পিটিআই ২০০৯ ও ২০১০ এবং জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পিটিআই ২০১০ জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পিটিআই ইন্সট্রাক্টর ২০১১ ( জনাব সুবোধ কুমার রায়) ২০১১ সালে নেপ এ মৌলিক প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় স্থান । • খুলনা বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ সুপারিনটেনডেন্ট : ২০১১ • পিটিআইকে আকর্ষণীয় করার জন্য টাইলস এ বাংলাদেশের মানচিত্রে পিটিআই সমূহের অবস্থান, টাইলস এ মাগুরা পিটিআই, পতাকা স্ট্যান্ড, পিটিআই এর নামফলক ও ফুলের বাগানকরণসহ বিবিধউন্নয়নমূলক কাজ করা হয় । • বহিরাগতদের উৎপাত দূর করার জন্য গ্রিল দিয়ে ২য় গেট ও বাউন্ডারি দেয়া হয় । এরপর বদলী হন যশোর পিটিআইতে। ১১/০৩/২০১২ হতে ১০/০৫/২০১৮) সেখানে অর্জিত সাফল্য সমূহ: বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ পিটিআই ২০১৫ ও ২০১৬ এবং জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পিটিআই ২০১৬ খুলনা বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ সুপারিনটেনডেন্ট : ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ = ৫ বার জাইকা কর্তৃক আয়োজিত সুপারিনটেনডেন্টগণের ৯ম ফ্লোআপ প্রোগ্রামে ( ০৭/০৪/২০১৫) যশোর পিটিআই প্রথম স্থান লাভ করে । ২০১৬-২০১৭ সেশনে Univerdity of South Wales, UK থেকে MA Education (Innovation in Learning & Teaching) এর উপর Masters course সাফল্যের সাথে অর্জন । জাপানের প্রশিক্ষণে গিয়ে দেখি ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষক জাপানে বসেই ইন্দোনেশিয়ার কার্যক্রম মনিটরিং করছেন । এটা দেখে – পিটিআই গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম যশোর পিটিআই এ ২০১৫ সালে অনলাইন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয় যা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ইনোভেশন আইডিয়া হিসেবে নির্বাচিত হয় । এছাড়া ২০১৬ সালে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করা হয় । আমার এই ডিজিটাল কার্যক্রম জোড়দার করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান সদর, যশোর মহোদয় পিটিআই এর জন্য ৩ টি প্রজেক্টর প্রদান করেন । পিটিআই এর মাঠের মধ্য হতে মসজিদ এক পার্শ্বে নিয়ে বহিরাগত মুসল্লিগণের পিটিআই ক্যাম্পাসে প্রবেশ না করে নামাজের ব্যবস্থা ও খেলার মাঠ সম্প্রসারণ করা হয় । ৫ টি আর ও সিস্টেম ম্যাশিনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয় । ২০১৪ সালে টট সংগীতের মাধ্যমে ১৩ টি সংগীত রেকর্ডিং করে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে । • এছাড়া সরকারি অর্থায়নে এলজিইডির মাধ্যমে প্লান করা থেকে কাজ বাস্তবায়ন ও চলমান রাখা হয়েছিল : • একাডেমিক ভবন তৃতীয় তলা থেকে ৪র্থ তলা সম্প্রসারণ । • মহিলা হোস্টেল তৃতীয় তলা থেকে ৪র্থ তলা সম্প্রসারণ যা আর অন্য কোন পিটিআইতে হয়নি । • পুরাতন পরীক্ষণ বিদ্যালয় ভেঙ্গে একই যায়গায় নতুন ৩য় তলা বিশিষ্ট পরীক্ষণ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ । • এসি গেস্টরুম ( মহিলা হোস্টেলের ভিতর) । • বিদ্যুতের তার ও খুটি পরিবর্তনের জন্য ৬ লক্ষ টাকার বাজেট অনুমোদন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রেখেছিলাম । • অডিটোরিয়াম এর কাজ ২০১৬ সালে শুরু হয় ।
এরপর বদলী মুন্সিগঞ্জ পিটিআইতে । কর্মকালীন ১৫/০৫/২০১৮ হতে বর্তমান পর্যন্ত) গচজফচন অর্জিত সাফল্য সমূহ: • বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট ২০১৯ • প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০১৮-১৯ • মুন্সিগঞ্জ পিটিআইতে যোগদানের ১৫ দিনের মধ্যেই বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রন , শ্রেণিকার্যক্রম ও পরীক্ষাকার্যক্রম অনলাইনে পরিদর্শনের জন্য ১৬ টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন । • প্রাথমিক শিক্ষা অধিদদপ্তর কর্তৃক ঢাকা বিভাগের মধ্যে ১৭ নং সিরিয়ালে ১ টি উদ্ভাবনী ধারণা ২০১৯-২০ অর্থ বছরে অনুমোদিত হয়েছে । • ডিপিএড শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজি বির্তর্ক প্রচলন ও পুরস্কার প্রদান, বছরে কোন নৈমিত্তিক ছুটি না নিলে পুরস্কার ও সনদ প্রদান • আইসিটি প্রশিক্ষণের শতভাগ অনলাইন এন্ট্রি ও প্রত্যেক ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম, ২য় ও তৃতীয় নির্বাচন ও পুরস্কার প্রদান । • বিদ্যুতের খুটি ও গ্যাস পাইপ অপসারণ ও মাঠ সম্প্রসারণ । • প্রায় ২০ বছরের অব্যবহৃত পুকুর পরিষ্কার করে মাছ করা । • মহিলা হোস্টেলের অধিকতর নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাকরণ । • পিটিআই ক্যাম্পাস সুরক্ষার জন্য হ্যালোজেন বাতি স্থাপন । • টাইলস এ নির্মিত মুন্সিগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব মানচিত্র স্থাপন । • ৮০ টি টেবিল, ১৫০ টি চেয়ার , সোফা সেট, টি টেবিল, ২ টি জুতা রাখার রাখার তাক ,ওযুখানা, জেলা পরিষদের মাধ্যমে পুকুরের ঘাট নির্মাণের অনুমোদন । • ই-নথি কার্যক্রমে মুন্সিগঞ্জ পিটিআই অধিকাংশ মাসে পিটিআই গুলোর মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করে । • কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষ ও ইনোভেশন অফিসার । • এ পর্যন্ত ১০ টি প্রাথমিক শিক্ষার নীতি ও দিকনির্শেনামূলক তথ্যবহুল প্রবন্ধ / নিবন্ধ/ বই প্রকাশ করেছেন । • একাডেমিক ভবন, মহিলা হোস্টেল ও সুপার কোর্য়াটারের সেফটি ট্যাংকি পরিষ্কারকরণ । • একাডেমিক ভবনের সকল বন্ধ ওয়াশরুম মেরামত করে চালুকরণ । • আইসিটি দ্রব্য ল্যপটপ, প্রজেক্টর , ডেস্কটপ কম্পিউটার মেরামত , স্ক্যানার , সাউন্ড সিস্টেম ও স্পীকার ক্রয় , পুরাতন বিল্ডিং অপসারণ, একাডেমিক ভবন, দুই হোস্টেলে সাবমার্সিবল অটো পানির পাম্প বসানো প্ল্যান করে নানান রকমের ফলদবৃক্ষ রোপন। এখানে আরও কিছুদিন থাকলে মুন্সীগঞ্জ পিটিআই হয়তো একটি অডিটোরিয়াম এবং একটি গেস্টরুম হয়ে যেতো। যিনি এতো কাজের কার্ণধার তিনি ২৩/০৭/২০২০ তারিখে যোগদান করবেন ঢাকা পিটিআইতে। সেখানে তিনি অধিকতর ইনোভেটিভ কাজ করবেন, আরো বেশী মেধার স্বাক্ষর রাখবেন বলে বিশ্বাস করি।
মুন্সীগঞ্জবাসী আপনাকে চিরদিন মনে রাখবে আপনার কাজ এবং মধুর ব্যবহারের জন্য।
আপনার এবং আপনার পরিবারের সবর্বাঙ্গীন মঙল কামনা করি।
শাহানা সিরাজী ইন্সট্রাক্টর(সাধারণ)
পিটিআই মুন্সীগঞ্জ
কবি, প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক